বাংলাদেশে ক্রমাগত সাংবাদিক হত‍্যা-নির্যাতন: তবুও মিডিয়া ও সাংবাদিকরা শতভাগ স্বাধীন!


জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ।। কোথায় রিজভী নেওয়াজ এবং নরওয়ে থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব‍্যবসায়ী ও মিডিয়া মালিক লতিফুর রহমান? এই দুজন শান্তি ও মানবাধিকারের দেশ নরওয়েতে কিছুদিন আগে বলে গেলেন যে, “বাংলাদেশের মিডিয়া ও সাংবাদিকরা শতকরা একশত ভাগ স্বাধীনতা ভোগ করছেন”। এরপরই লতিফুর রহমানের পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলোর তিন ফটো সাংবাদিককে জনারন‍্য রাস্তায় পেটালো পুলিশ। অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজ এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো। ওই ঘটনায় দুই সাংবাদিক ও এক কর্মচারি আহত হলেন। সাংবাদিক সাগর-রুনির খুনিরা আজও ধরা পড়েনি। আর গতরাতে দেশে আরেক সাংবাদিক খুন হলেন। যশোর থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক গ্রামের কাগজ এর সাংবাদিক জামালউদ্দীনকে সন্ত্রাসীরা বেশ কিছুদিন ধরে হত‍্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। এবিষয়ে তিনি থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের ঠুটো জগন্নাথমার্কা পুলিশ, র‍্যাব জামালউদ্দিনকে শেষ পর্যন্ত হত‍্যাই করে ফেললো। এ থেকেই বোঝা যায় দেশে সন্ত্রাসী, মাদক ব‍্যবসায়ীরাই র‍্যাব-পুলিশের চেয়ে শক্তিশালী। দুবর্ৃত্ত রাজনৈতিক শক্তির মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী-মস্তান ও গুন্ডাদের হাতে একের পর এক সাংবাদিক খুন এবং নির্যাতিত হচ্ছেন। তারপরও একদল সরকারি চাটুকার ও দালাল সাবাদিক-মিডিয়া মালিক সত‍্য চেপে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ‍্যবোধ করছেন। কিন্তু কেন, তাতে কী মিডিয়া ও সাংবাদিকরা লাভবান নাকি ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন?
নিহত সাংবাদিক জামালউদ্দিন শার্শা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সবর্নাশা মাদক ব‍্যবসার ওপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবদেন লিখেছিলেন এই সাহসী সাংবাদিক। আর সেটাই কাল হয়ে গেলো এই সাংবাদিকের জীবনে। সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে, হাত পায়ের রগ কেটে ও চোখ উপড়ে হত্যা নৃশংসভাবে হত‍্যা করে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাবনা প্রতিনিধি এ বি এম ফজলুর রহমানের ওপর হামলাকারীরাও আজও গ্রেফতার হয়নি। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি মোহাম্মদ নাসিম। এই নেতার কথা, “সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার না হলে সরকারের সুনাম নষ্ট হয়। একটি স্বাধীন দেশে এ অবস্থা চলতে পারে না।” গত ১৯ মে দুপুরে এডওয়ার্ড কলেজ ক্যাম্পাসের শিক্ষক ডরমেটরির সামনে সন্ত্রাসীরা পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এই সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলেও অভিযোগ আছে! আসলে সুনাম থাকলেতো সেই সুনাম নষ্টের প্রসঙ্গ আসতে পারে!
রিজভী নেওয়াজ নামে এক সাংবাদিক নরওয়ে থেকে বাংলঅদেশে ফিরে গিয়ে আমাকে রীতিমতো ধমক দিয়ে একটা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তার দাবি, “আমি নাকি বাংলাদেশ সম্পর্কে কুৎসা রটাচ্ছি! তিনি একইসঙ্গে নরওয়জিয়ানদের ব্লাডি বলে গালমন্দও করেন সেই চিঠিতে।” আমার প্রশ্ন সাংবাদিক হত‍্যা নির্যাতনের ঘটনাগুলির তথ‍্য তুলে ধরলে কী তাকে কুৎসা রটানো বলে অভিহিত করা যায়? সত‍্যটাকে চেপে যায় যারা তাদেরকে সুবিধাবাদি বা মতলবাজ বললে কী খুব বেশি ভুল বলা হয়? রিজভী নেওয়াজ ও লতিফুর রমানকে বলছি সত‍্য কখনও বিপদজনক হতে পারে না।
রিজভী নেওয়াজরা কী বলতে পারেন মেঘেরা কেন এতিম হচ্ছেন বাংলাদেশে? সাগর-রুনির হত‍্যাকান্ড, বিডিনিউজে হামলা, জামালউদ্দিন, মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালু, দীপংকর গৌতম, গৌতম সাহা,হারুন রশিদ খোকন, শ ম আলাউদ্দিন, শামছুর রহমান কেবলসহ ৪২ জন সাংবাদিক হত‍্যা কী প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের মিডিয়া ও সাংবাদিকরা শতভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন? সাংবাদিক জামালউদ্দিনের হত‍্যাকান্ড নিয়ে ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশে ৪২ জন সাংবাদিক ও একজন বিখ‍্যাত লেখক অধ‍্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ নিহত হলেন। এরমধে‍্য ক’টি হত‍্যাকান্ডের বিচার পাওয়া গেছে বা সঠিক ও কার্যকর তদন্ত হয়েছে তা কী লতিফুর রহমানরা বলতে পারবেন? আর কত শত সাংবাদিক নির্যাতিত এবং মিথ‍্যা ও হযরাণিমূলক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন তার হিসাব কী রিজভী নেওয়াজদের হাতে আছে? মাত্র ছয় বছরের শিশু মাহির সরোয়ার মেঘ কে আজ একাই জন্মদিন পালন করবে, সেই উত্তর কী আছে রিজভী নেওয়াজ ও লতিফুর রহমানের কাছে?
নিহত সাংবাদিকরা হলেন ১. মানিক সাহা (বিবিসি, দৈনিক সংবাদ ও নিউ এইজ), ২. হুমায়ুন কবির বালু (সম্পাদক দৈনিক জন্মভূমি), ৩. সাইফুল আলম মুকুল (সম্পাদক দৈনিক রানার), ৪. দীপংকর চক্রবর্ত্তী (নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক দুর্জয় বাংলা), ৫. শামছুর রহমান কেবল (বিশেষ সংবাদদাতা দৈনিক জনকণ্ঠ), ৬. শ ম আলাউদ্দিন (সম্পাদক দৈনিক পত্রদূত), ৭. শেখ বেলালউদ্দিন (দৈনিক সংগ্রাম), ৮. হারুন রশিদ খোকন (দৈনিক পূর্বাঞ্চল), ৯. গৌতম দাশ (দৈনিক সমকাল), ১০. ফরহাদ খাঁ (যুগ্ম সম্পাদক দৈনিক জনতা), ১১. ফতেহ ওসমানী (সাপ্তাহিক ২০০০), ১২. মোহাম্মদ গোলাম মাহফুজ (সম্পাদক দৈনিক কুমিল্লা মুক্তকণ্ঠ), ১৩. ফারুক হোসেন (দৈনিক রানার), ১৪. কামাল হোসেন (দৈনিক আজকের কাগজ), ১৫. সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ (দৈনিক পূবালি বার্তা), ১৬. নহর আলী (দৈনিক অনির্বাণ), ১৭. শুকুর হোসেন (দৈনিক অনির্বাণ), ১৮. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (সাপ্তাহিক নীলসাগর), ১৯. এম এম আহসান হাবিব বারী (নির্বাহী সম্পাদক সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক সময়), ২০. আবুল হাসান আসিফ (দৈনিক ইনকিলাব), ২১. আলতাফ হোসেন (সাপ্তাহিক ব্রজকণ্ঠ), ২২. মাহবুব টুটুল (আজকের প্রত‍্যাশা), ২৩. ফরিদুল ইসলাম রনজু (দৈনিক ভোরের ডাক), ২৪. রফিকুল ইসলাম (দৈনিক লোকসমাজ), ২৫. মনির হোসেন রাঢ়ী (সভাপতি মুলাদী প্রেসক্লাব), ২৬. জামালউদ্দিন (রাঙ্গামাটি), ২৭. আহসান আলী (নারায়ণগঞ্জ), ২৮. বজলুর রহমান (চুয়াডাঙ্গা), ২৯. আবদুল হান্নান (ডেমরা), ৩০. সারওয়ারুল আলম নোমান (ময়মনসিংহ), ৩১. আবদুল গফ্ফার চৌধুরী (যশোর), ৩২. রেজাউল করিম রেজা, ৩৩. নাবিল আবদুল লতীফ, ৩৪, আনোয়ার এ‍্যাপোলো, ৩৫. শফিকুল ইসলাম মিঠু ( ফটো সাংবাদিক, এটিএন বাংলা), ৩৬. আতিক ইসলাম আতিক (ভিডিও সম্পাদক এনটিভি), ৩৭. নূরুল ইসলাম রানা (মুক্তমন), ৩৮, মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপ (দৈনিক বীর দর্পণ), ৩৯. গোলাম মাজেদ (প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দৈনিক রানার), ৪০. সাগর সরোয়ার (বার্তা সম্পাদক মাছরাঙ্গা টিভি), ৪১. মেহেরুন রুনি (সিনিয়র রিপোর্টার এটিএন বাংলা), ৪২. জামালউদ্দিন (দৈনিক গ্রামের কাগজ)। এছাড়া মৌলবাদি জঙ্গিদের হামলায় গুরুতর আহত ঢাকা বিশ্বিবদ‍্যালয়ের অধ‍্যাপক বিশিষ্ট লেখক ড. হুমায়ুন আজাদ পরবর্তীতে মারা যান।
এতকিছুর পরও সরকারি দালাল ও জ্ঞানপাপীরা বলবে যে দেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা আছে? ছবি ফেইসবুক থেকে নেয়া।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান