সাগর-রুনির আত্মা কষ্ট পাচ্ছেন, একটু ভাবুন প্লিজ!

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ।। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বটাতো সরকারেরই। এই নূ‍্যনতম জ্ঞানটুকু যাদের নেই তারা কী করে দেশ চালাবে? কী নির্লজ্জ, বেহায়ার মতো আবার বলছি আমরা “সরকারের পক্ষে কারও বেডরুম বা শয়নকক্ষ পাহারা দেয়া সম্ভব নয়”। জনগণ বলেনি যে তাঁদের বেডরুম পাহারা দেয়া হোক। সাংবাদিক সমাজও এমন দাবি করেনি। সবার দাবি একটাই শান্তিতে ঘুমানোর। অকারণে মানুষ খুন হবেন, সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাবেন। আর সেই খুনিদের গ্রেফতারের জন‍্য ন‍্যায়বিচার পাবার আশায় কেউ একতাবদ্ধ হতে পারবে না! জনগণ বা সাংবাদিকরা মহাজোট সরকারের কাছে এমন কোন দস্তখত দিয়েছে নাকি? একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে জাতির সঙ্গে মশকরা করার কী কোন অধিকার সংবিধানের কোথাও লেখা আছে? ঘরে, বাইরে সবর্ত্রই মানুষ নিরাপত্তাহীন। সরকার মানুষের নিরাপত্তার পরিসর বাড়ানোর চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক। সেখানে জীবন ও পেশার নিরাপত্তার দাবিতে সাংবাদিকরা যখন ঐক‍্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হলেই কাউকে শিক্ষিত বলা যে যায় না, তারই প্রমাণ রাখলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার এমন দায়িত্বজ্ঞান তথা কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব‍্য খুনি, সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করবে, সমাজকে আরও নিরাপত্তহীন করে তুলবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। সাংবাদিক সাগর-রুনির খুনের আলামত নাকি উৎসুক জনতা ও সাংবাদিক ফটো সাংবাদিকরাই নষ্ট করে ফেলেছেন। বেকুব ছাড়া কোন জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এমন কথা বলতে পারে? প্রধানমন্ত্রীর বক্তবে‍্যর মধ‍্য দিয়ে একটা বিষয় পরিস্কার হলো। আর তা হচ্ছে সর্ষের মধে‍্যই ভুত! সাগর-রুনির খুনিদের ধরার ইচ্ছে নেই তাই নানান অজুহাত খাড়া করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে আলামত নষ্ট হয়ে গেছে, সময় লাগবে, তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই, শতভাগ নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিশ ইত‍্যাদি। এসবকিছুই আসলে উদ্দেশ‍্যমূলক কালক্ষেপণ এবং পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়া, খুনিদের বাঁচানোর একটা পরিকল্পিত কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
নিরাপত্তা কেবল বঙ্গভবন আর গণভবনের নয় সারাদেশের সকল ভবন মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারেরই। এই নূ‍্যনতম দায়িত্ববোধ যার নেই তিনি আর প্রধানমন্ত্রী থাকার নৈতিক অধিকার রাখেন কী? হাসিনা দেশবাসিকে আরও নসিহত করে বলেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা যাওয়ার আগে কেউ ভেতরে ঢুকে আলামত নষ্ট করতে না পারে ভবিষ‍্যতে তার দিকে জনগণকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন। বাহ্ কী চমৎকার কথা। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব‍্য পরোক্ষভাবে জানান দিচ্ছে যে, এধরণের নৃশংস হত‍্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা অব‍্যাহত থাকবে। কিন্তু তিনি এটা বলেননি যে ভবিষ‍্যতে আর এমন হত‍্যাকান্ড যাতে না ঘটে তার জন‍্য পুলিশ, র‍্যাব ও সরকার সজাগ থাকবে।
পরিশেষে বলবো প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব‍্য কেবল বালখিল‍্যই নয় সংবিধানেরও সুষ্পষ্ট লংঘণ। কারণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার সময় তিনি জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মহান দায়িত্ব পালন করার অঙ্গিকার করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকেই উদ্দেশ‍্য কনরে আরও বলবো, সাগর-রুনির খুনিরা আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কিংবা মহাজোট সরকারের যদি খুবই ঘনিষ্ঠও হয় তবুও তাদের গ্রেফতার করুন। পরবর্তীতে নাহয় সাগর-রুনির আত্মা, তাদের প্রিয় সন্তান মেঘ, সাগর-রুনির পরিবার খুনিকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু জাতির সামনে খুনিদের আগে হাজির করুন, হত‍্যারহস‍্য উন্মোচন করুন। আর কোন নাটক সাজাবেন না প্লিজ! নইলে সাগর-রুনির আত্মা হয়ত খুনিদের ক্ষমআ করলেও খুনীদের রক্ষার অভিযোগে আপনাকে ক্ষমা করবেন না। সাগর-রুনির আত্মা কষ্ট পাচ্ছেন, একটু ভাবুন প্প্লিলিজ! প্লিজ বন্ধ করুন আপনাদের নাটক। খুনিদের ধরুন, তারা মাটির নিচে যায়নি। আরেকটি কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনারা একটু কথাবার্তায় সংযমী হোন, নইলে এই অসংম ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে আগামী নির্বাচনে! ছবিটি আমারদেশ থেকে নেয়া

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান