সাংবাদিক রোজিনার মুক্তি, সাগর-রুনির খুন, প্রধানমন্ত্রির জরিমানা এবং গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য ও অসুস্থ্যতা!

ছবিটি তোলা হয় ২৯.০৪.২০০৯, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আকাশ এর লেখা “উদীচী থেকে পিলখানা” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে।

জাহাঙ্গীর আকাশ।। দুর্নীতির চেইন অব কমান্ড ভাংতে চাইলে আগে রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল এবং দলের নেতৃত্বের ভেতরে যে অসুস্থতা আছে সেগুলিকে সারাতে হবে। এজন্য চাই কমিটমেন্ট আর সাহস ও স্বচ্ছতা।

না, আমি আমার মাতৃভূমির কথা বলছি। আমার নতুন দেশের সাংবাদিকরা যে স্বাধীনতা ভোগ করে তাকে স্বর্গে বসে সাংবাদিকতা করার সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না। আর এটা সম্ভব একারণে যে এখানে সত্যিকারের গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের চর্চা হয়। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে।

সম্প্রতি এদেশের প্রধানমন্ত্রী “করোনাআইনের নির্দেশনা ভঙ্গ করে” নিজের জন্মদিনের পারিবারিক উৎসবে যোগদান করায় পুলিশ তাঁকে জরিমানা করেছে। সে আবার কি, ১০ জনের স্থলে ১৪ জন সমবেত হয়েছিল সেই উৎসবে। আর তাতেই হয়ে গেল খবরের শিরোনাম। গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রধানমন্ত্রিও পুলিশের জরিমানাকে মেনে নিলেন। ক্ষমাও চাইলেন দেশের মানুষের কাছে। গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের কী দারুণ সৌন্দর্য্য! কেউ কি কল্পনাও করতে পারে এমন ঘটনা সেখানে (বাংলাদেশে) সম্ভব?

উন্নত বিশ্বেও দুর্নীতি আছে, অনিয়ম হয়, সন্ত্রাস, হত্যা-নির্যাতন সবই চলে। কিন্তু বিচারও হয়। আইন সবার বেলায় সমানভাবেই প্রয়োগ হয়। যেমন ধরুন, এদেশের সাবেক পুলিশ প্রধানের দুর্নীতির দায়ে জেল হয়ে গেছে।

বলার স্বাধীনতা তথা ফ্রিডম অব স্পিস এর যে শক্তি দেশের সংবিধানে দেয়া আছে, তাকে নড়াতে পারে এমন শক্তি কারও নেই। ধরুন, আমি এখানে সরকারি চাকরি করি আবার আমি আমার মতামতও স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারি। আমি কলাম লিখছি এদেশের মিডিয়ায়। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, এদেশে সাংবাদিকতার নীতিমালা আছে এবং এই নীতিমান লংঘন করে কেউ সাংবাদিকতায় টিকতে পারবে না।

একটি মন্ত্রনালয়ের প্রধান যদি, সৎ, স্বচ্ছ, নীতিবান ও ঘুষখোর না হয় তাহলে কি সেই মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারি দুর্নীতি করতে সাহস পায়? সাংবাদিক রোজিনাকে চিনি সাংবাদিকতার মাধ্যমেই, সে একটি মন্ত্রনালয়ের প্রধান যদি, সৎ, স্বচ্ছ, নীতিবান ও ঘুষখোর না হয় তাহলে কি সেই মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারি দুর্নীতি করতে সাহস পায়? সাংবাদিক রোজিনাকে চিনি সাংবাদিকতার মাধ্যমেই, অনেক আগের কথা। তথ্য জানার অধিকার জনগণেরই অধিকার আর সেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন পেশাদার সাংবাদিকে যখন লাঞ্ছিত হতে হয়, গ্রেফতার ও হাজতে যেতে হয়, তখন কি কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে যে গণমাধ্যম স্বাধীন?

যখনই সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে রাজনৈতিকভাব দ্বিধাবিভক্ত সাংবাদিক ও নাগরিক (সুশীলসমাজসহ) সমাজ কাঁপিয়ে তোলে রাজপথ, পাশাপাশি ঝড় ওঠে সোশ্যালমিডিয়ায়। আবার সব থেমে যায়, ঠিক একইভাবে থেমে যাবে সব চিৎকার চেঁচামেচি এবারেও, কারণ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম কারামুক্ত। আবারও ঘটবে একটা নতুন ঘটনা, সবাই জেগে উঠবে তখন, ফের থেমে যাবে সব। এভাবেই তো চলছে পালাক্রমে বারংবার।

এখানে একটি উদাহারণ দিতে চাই। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হাইকোর্ট এই চাঞ্চল্যকর হত্যামামলার তদন্তভারের দায়িত্ব দেয় দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সমস্থাটিকে যাদের হাতে আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যেগুলি তারা ব্যবহার করে তদন্তকাজকে সহজতর করতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ নয় বছরেও সংস্থাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে আমার জানা নেই। দেশের সাংবাদিক সমাজ এটাও হয়ত জানে যে এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যার পেছনে কোন শক্তির হাত রয়েছে। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের পেছনেও কি দুর্নীতিবাজচক্র জড়িত নেই?

আরও বলে রাখা ভালো যে, আমাকে যারা খুনি, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে গ্রেফতার, নির্যাতন ও জেলে পাঠিয়েছিল তাদেরকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি হৃদয় থেকে। কিন্তু আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে পারব না যারা মহান সাংবাদিকতা পেশায় থেকেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে ওই দুর্বৃত্তচক্রের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি বন্ধ না হলে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্যের স্বাদ দেশের মানুষও পাবে না, সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতাও মিলবে না। বরং গণতন্ত্রের অসুস্থ্য ও কদর্য চেহারাটাই বেরিয়ে আসবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ- চেতনা আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামও কিন্তু দুর্নীতি, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠারই সংগ্রাম ছিল জীবনভর।

সেই স্বাধীনতার স্বাদ পাবার ও স্বপ্ন বাস্তবে সবার জীবনে ধরা দেবে এবং সুন্দর হবে প্রতিটি মানুষের জীবন আর ঘরে-ঘরে গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ। শুধু একদল লোভী, ক্ষমতাভোগী দুর্নীতিবাজরা টাকার পাহাড় গড়ে তুলবে তার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি দেশের মানুষ।

“আমার অহংকার, আমার অসহায়ত্ব”

২০০৯ সালের ২১ এর বইমেলায় “অন্ধকারে ১৫ ঘন্টা” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করছেন শিক্ষাবিদ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক

মাকে মনে পড়ে। জন্মভূমিকে খুঁজে ফিরি। পরভাষাকে আপন করে দেখি। বাংলায় লিখি না, কথা বলি না। আমি ছাড়া অন্য সব বাঙালিই তো বাংলার চর্চা করে চলেছেন। বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি আর একটা অসাম্প্রদায়িক দেশের জন্য যে লড়াই, সংগ্রাম ও ত্যাগ তার স্বাদ কি বাঙালি পেয়েছে, আজও যেখানে একদল ধর্মান্ধের কাছে রাষ্ট্র নতি স্বীকার করে শিল্প-সংস্কৃতিকে উপড়ে ফেলতে ঔদ্ধত্য দেখায়? বাঙালির ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়েইতো আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমার সমাজ, আমাদের রাজনীতি, যারা দেশ চালায় তারা কী কোনদিনও একজন স্বদেশহারা মানুষের মনোবেদনা বোঝার চেষ্টা করতে পারবে যেখানে তোষামদি, পরিবারতন্ত্র, স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতি বড় হয়ে ওঠে? যারা মিথ্যা অভিযোগ সাজায়, ভুয়া সাক্ষ্য দেয় একজন সৎ ও সাহসী মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য আর রাষ্ট্রীয় সকল পদ্ধতি ওই দুষ্ট চক্রের পক্ষে দাঁডায় তখন কী কারও বলার অধিকার থাকে যে যারা ভীরু এবং দেশকে ভালোবাসেনা তাঁরাই দেশ ছেড়ে পালায়। আমি মনে করি, সকল দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রে আছে অনিয়ম, দুর্নীতি, ধর্ষণ আর ঘটে নানা অপরাধ, সেটা বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত কিংবা ধনী দেশই হোক না কেন? কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (যদিও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে ইচ্ছেমত করে আঘাত দেওয়াকে আমি মনে করি না যে এটা স্বাধীনতা কিন্তু দায়িত্বহীনতা। ধর্মকে কটাক্ষ না করে দারিদ্রতা, অশিক্ষা, অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, বৈষম্য, ধর্মান্ধতা, অপরাধ, অরাজকতাসহ সমাজে শত সমস্যা আছে যেগুলো নিয়ে কথা বলা যায়, ব্যঙ্গ করা যায়, রাস্তায় নামা যায়, লেখালেখি করা যায়, মানুষকে একত্রিত করা যায়। ধর্মতো ব্যক্তিগত বিশ্বাস, কেউ বিশ্বাস করলে করবে, কেউ না করলে না করবে। মানুষইতো মূল কথা। একটা শিশু যখন জন্ম নেয় তখন কী সেই শিশু সব ঠিক করে জন্ম নেয় যে ও হিন্দু হবে, মুসলমান হবে, খ্রীষ্টান হবে, বৌদ্ধ ধর্ম পালন করবে, ইহুদি ধর্মে আস্থা রাখবে নাকি ও আদিবাসি পরিবারে বেড়ে উঠবে? শিশুটি যখন একটা পরিবারে বড় হতে থাকবে সে তো সেই পরিবারের বিশ্বাস, আচার, কানুন, সংস্কৃতি আর অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে থাকবে। আর এটা ভাবাও বোকামি যে সবাই নাস্তিক হবে বা সবাই আস্তিক কিংবা সবাই আপনার মতো চিন্তা করতে বাধ্য।) আর রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলো কাজ করে ঠিক যেভাবে করার কথা। আমার অহংকার, আমি বাঙালি। আমার অসহায়ত্ব, আমি স্বদেশ হারিয়েছি। আমার ভালো লাগা আর বেঁচে থাকা এইজন্য যে আমি একটা নতুন দেশ পেয়েছি আর একটা নতুন ভাষা রপ্ত করতে পেরেছি। তাইতো আশা, ভালোবাসা আর ভরসা পাই এইভেবে যে ভবিষ্যতে মানুষের জন্য কিছু একটা করতে পারবো সেটা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, কারণ মানুষ তো মানুষেরই জন্য, ২১.০২.২০২১

নারী নির্যাতন ও আমার মত

জাহাঙ্গীর আকাশ ।। আমার মনে হয়, যখন একজন পুরুষ তার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে নিজের বাবা-মার আসনে এবং শ্যালক-শ্যালিকাকে নিজের ভাই-বোনের আসনে, আর যখন একজন বোন তার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে আপন বাবা-মার আসনে এবং ননদ-দেবরকে নিজের ভাই-বোন ভাবতে পারবে তখনই সংসার সুন্দর আর সুখের হয় এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাও মধুর হয়।

সমস্যার সূত্রপাত হয় তখন যখন অর্থনীতির ব্যাপারটা সামনে এসে দাঁডায় এবং আমার আর তোমার হিসাব শুরু হয়! এটা আমার ধারণা। যারা এই ধারণার ভেতরে পড়ে না তারা ব্যতিক্রম এবং এবং ভালো মানুষের উদাহারণ।

একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, মানুষ যদি মৃত্যুটাকে সবসময় মাথায় রাখতে পারে এবং এটা যে অবধারিত, পৃথিবীর কোন শক্তি থামাতে পারে না মৃত্যুকে-এই চিন্তাটা মাথায় কাজ করলে মানুষ আর স্বার্থপর হতে পারে না।

“সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিচার আর আমার ক্ষমা”

জাহাঙ্গীর আকাশ// সমস্যার মূলে কেউই যেতে চাই না। আমার প্রশ্ন হলো- আমাদের মিডিয়া, সুশীল সমাজ আর যারা সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর বেশ তৎপর এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তারা কেন এমন বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর একইভাবে ফুসে উঠে না? প্রায় প্রতিটি ক্রসফায়ারের গল্পই সাজানো নাটক এবং যেই বাহিনীর দ্বারাই ঘটুক। এই মহাসত্যটি স্বীকার করেই এমন সব হত্যাকান্ডই বন্ধ করতে হবে। নইলে এভাবে সিনহারা একের পর এক হারিয়ে যাবে একই গল্পের তলে। সিনহা হত্যার বিচার আমিও চাই। আমাকে যারা স্বদেশহারা করেছে এই তথাকথিত ক্রসফায়ার নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার জন্য তাদের সবাইকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি জানি আমার ওপর যে বর্বরতা ও অমানবিকতা হয়েছে তার বিচার মিলবে না। প্রত্যাশা এতটুকুই যাতে আর কোন সিনহাই এভাবে নিহত না হন।

হৃদয় কাঁদে প্রবাসে, মানুষ পুড়ে স্বদেশে

জাহাঙ্গীর আকাশ ॥ মানুষের জীবনের চেয়ে ৫০ হাজার টাকার সাহায্যপ্রদান বড় হয়ে ওঠেছে সংবাদমাধ্যমের কাছে। এটা আমার মায়ের দেশের খবর। বিশ্বাস না হলে, গত সোমবারে (১৭.১২.২০১৮) ঢাকার শ্যামপুরের কদমতলী স্টিল মিলের ভেতরে যে “হত্যাকান্ড” ঘটেছে তার অনুসন্ধান করুন।

এই চুল্লিবিস্ফোরণের মর্মান্তিক ঘটনাকে আমি হত্যাকান্ডই বলবো। কারণ এসব স্টিলমিলে কি পরিবেশে মানুষ কাজ করে, শ্রম আইনগুলি কী যথাযথভাবে কার্যকর হয় এসব কারখানায়? যেসব মানুষ এমন কারখানায় কাজ করে তারা কী তাদের ন্যায্য শ্রমমূল্য পায়? কেন এমন বিস্ফোরণ ঘটছে বারংবার? কারা এসব কারখানার মালিক?

বারবার মানুষ নিহত, আহত হচ্ছে। মালিকের কিছু হয় না কেন?  প্রায় দুই দশক ধরে মানুষের মুক্তির জন্য দেশে সাংবাদিকতা করেছি। বিনিময়ে দেশহারা হয়েছি। তাই একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জা, ঘৃণা আর আত্মযন্ত্রণাবোধ নিয়ে আমার অনুভূতি প্রকাশ করছি মাত্র। বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আমার একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে! যেখানে তিন তিনটা তরতাজা মানুষের জীবন পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।

১৪ জন শ্রমজীবী মানুষ আগুনে পুড়ে দগ্ধ হলো। কেন বিস্ফোরণ ঘটলো, কী পরিবেশে সেখানে মানুষ কাজ করে? শ্রমআইনের কতটুকু কার্যকারিতা আছে? কত পুরনো মেশিনে সেখানে কাজ চলে? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর দেখলাম না বাংলাদেশের কোন মিডিয়ায়! কোন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চোখে পড়লো না আমার।

কোন মিডিয়ায় দেখলাম না যে, কে এই কারখানার মালিক? কারখানার মালিকের কোন বক্তব্য নেই গণমাধ্যমে! কিন্তু গণমাধ্যমে খবর এলো যে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে সাতজন মানুষের প্রত্যেককে মাত্র ৫০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ কি করলেন এই হতাহত শ্রমিকদের পরিবারের জন্য তার কোন কিছু উল্লেখ নেই গণমাধ্যমের খবরে!

গনমাধ্যমে এই ৫০ হাজার টাকার সহায়তা খবরের হেডিং হয়ে গেলো! একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে দারুণ অপরাধী মনে হয় গণমাধ্যমের এমন আচরণে। যখন একটি প্রধান জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক দু’জন প্রতথিতযশা সাংবাদিকের (একজন রাজশাহীতে, অন্যজন পঞ্চগড়ে) চাকরি কেড়ে নেন কলমের এক খোঁচায় তথাকথিত অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না যে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীন?

সংবাদমাধ্যমগুলিতে কদমতলী স্টিল মিলে নিহত একজন, আফছার হোসেন এর বয়স লেখা হলো ৪০, বছর কেউ কেউ লিখলো ৩৫ বছর, অথচ এই যুবকটির বয়স ২৪ বছর। তাহলে বুঝুন, সাংবাদিকতা কোথায় নেমে গেছে!

ঢাকা থেকে এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলাম যে, কদমতলী স্টিলমিলের ভেতরে হতাহতদের পরিবারের (সাত জনের পরিবার পেয়েছে এই টাকা) হাতে ৫০ হাজার করে টাকা তুলে দেবার আগে “না-দাবি” লিখে নেয়া হয়েছে। যখন সন্তানহারা মা-বাবা বাধ্য হয়ে কাগজে না-দাবির সই করেছেন তখন নাকি সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকও ছিল। এসব কথা কিন্তু কোন সংবাদমাধ্যমে আসেনি। কিন্তু কেন? কারণটা বুঝতে কারও বাকি থাকার কথা কী?

বেশ কিছুদিন আগে একজন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন যে, “এখানে (মানে আমার স্বদেশে) আর সাংবাদিকতা নেই। কোন কোন সাংবাদিক নাকি এক কাপ চা পান করার সুযোগ পেলেই নাকি যে কারও পক্ষে লিখে দেয়”!

আমি জানি না, মানুষ, মানুষের জীবন নাকি ৫০ হাজার টাকার সহায়তা গণমাধ্যমের কাছে বড়?

 

 

লজ্জ্বাহীন কাপুরুষের দল ধর্মদর্শন বোঝে না!

03-07-2016

জাহাঙ্গীর আকাশ ॥ আমি ক্ষুব্ধ। আমার করার কিছুই নেই। এজন্য নিজেকে বড় অসহায় মনে করি। ওরা অস্ত্রধারী। ধর্মকে ওরা ভুল ব্যাখ্যা করে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের খুন করলে ওরা নাকি “বেহেস্ত” এ যাবে। ওরে বোকার দল, তোরা জানিস না যে, পৃথিবীতে কোন ধর্মই মানুষ হত্যা অনুমোদন করে না। তোরা কেবল ধর্মকে ভুল ব্যাখ্যা করে এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে সবাইকে অশান্তির আগুনে ফেলছিস। একবারও কী ভেবেছিস যে, তোদের জন্মদাতা পিতা-মাতা, এবং তোদের স্বজনরাও এই আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরছে?

শংকা ছিল ওরা আঘাত হানতে পারে আমাদের সোনার বাংলায়! রাজনীতিকরা ক্ষমতার স্বার্থে স্বীকার করুক বা নাই করুক, মনে হতো ওরা আছে সর্বত্র। আমার আশংকাই আজ কাঁদালো আমাদের সবাইকে। ১৬ কোটি মানুষ আজ শোকাহত। আমি হতবাক হইনি। কিন্তু আমার হ্রদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আমার আর সহ্য হচ্ছে না এমন নৃশংসতা, বর্বরতা আর এতো কান্না।

ওরা কিভাবে বেড়ে ওঠলো, কারা ওদেরকে জন্ম দিলো, কিভাবে এই কাপুরুষের দল ফ্রাংকেনস্টাইনে পরিণত হলো, কেন আজ গোটা বিশ্বজুড়ে ওরা ওদের অমানবিক নৃশংসতার ডাল-পালা ছড়িয়ে দিচ্ছে? বোধকরি, এসব প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। আর এসবের উত্তর খোঁজার জন্য আজ আমার “ডিজিটাল কলম” কম্পিউটারে লিখতে শুরু করেনি। আমার ক্রোধ, আমার ব্যথা, আমার কষ্ট, আমার যন্ত্রণা আমাকে তাড়িত করে বেড়াচ্ছে। আমি আজ উন্মাদ, আমার মন আজ অশান্ত! এই তাড়না, হ্রদয়ের রক্তক্ষরণ কমানো আর অশান্ত মনকে শান্ত রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকেই আমার এই নড়ে ওঠা।

প্রধানমন্ত্রি বলছেন, অপরাধীদের শেকড় খুঁজে বের করা হবে! আমরা কী তবে জানি না যে অপরাধীদের শেকড়টা কোথায়, নাকি গেটা বিশ্বের কাছেই এটা দিবালোকের মতো পরস্কার “জঙ্গি”দের কে সৃষ্টি করেছে, কোন স্বার্থে? বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রসহ বহু রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একাধিক জোট ও সংস্থা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা বা দমন করতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোন ইতিবাচক ফল কি বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে?, এককথায় না। কার্যত রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় ব্যবস্থাই সন্ত্রাসবাদকে দমন করতে পারছে না। এর কারণ কি বিশ্ববাসী জানে না? নিশ্চয়ই এটা পরিস্কার যে, বৈশ্বিক এই যুগে সব রাষ্ট্র, সব দেশের একটা “ব্যবসায়িক স্বার্থ” জড়িয়ে যাচ্ছে এই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে খতম করার সত্যিকারের একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাবার প্রশ্নে! এর ফল হিসেব নৃশংসভাবে মানুষ হত্যার কলেবরটা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। বিশ্বের কোন দেশটি আজ নিরাপদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এর বাইরে, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন আজ?

প্রাকৃতিক তেল, গ্যাস আর জ্বালানি আজ বিশ্ব রাজনীতির এক বড় হাতিয়ার। আর এই হাতিয়ার বা সম্পদ যেসব দেশে আছে তার প্রায় সব ক´টি দেশেই আত্মঘাতি বোমা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও হানাহানি অবিরামভাবে চলছে। এর সাথে আছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এক উন্মত্ত নেশা। এই ক্মতার নেশাকে পাকাপোক্ত করতে গিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ তাদের অবস্থানকে সংহত করছে প্রতিনিয়ত।

কাজেই দেশে কোন “জঙ্গি” বা “আইএস” নেই এমনটা বলে দায় এড়ানোর কোন সুযোগই নেই। মানুষের আজ বদ্ধ ধারণা যে, সরকার যতই বলুক ওরা নেই, এদেশেরই মদদদাতারা এসব করাচ্ছে, এমনটা করে কেবল সন্ত্রাসীরাই আস্কারা পাবে তাদের জালটাকে বর্ধিত করার! গুলশানের পৈশাচিক বর্বরতার ঘটনার মধ্য দিয়ে একটা বিষয় এখন পরিস্কার যে, ওরা এখন আমাদের সোনার বাংলায় তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

দুই রাত ধরে ঘুমোতে পারছি না। স্বদেশের মাটি ছেড়ে আছি বহুদূরে। নিজের তাগিদে বা ইচ্ছায় দেশ ছাড়িনি। দেশের মাটিতে শরীরটা নেই বটে, তবে হ্রদয়টা আমার পড়ে আছে সেখানেই। আশা করেছিলাম, এবার বোধহয় রাজনীতির চোখ খুলবে স্বদেশে। ঘটনার পরপরই রাজনীতিকদের কথাবার্তা এবং ভাষণ-বক্তৃতায় তেমনই একটা আশা জন্ম নেয়। কিন্তু সময় যতই গড়াতে থাকলো, আমার আশাগুলিও নিরাশার অতল তলে হারিয়ে যেতে বসলো। কথায় বলে, “কুকুরের লেজকে যতই সোজা করে টেনে ধরি না কেন তা ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথেই বাঁকা হয়ে যায়”! না, আমার দেশের রাজনীতিকরা কুকুর নন। কিন্তু এই রাজনীতিকরা (সবাই নন, অধিকাংশই…) সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটামাত্রই তার দায় একে অন্যের ওপর চাপানোর একটা প্রতিযোগিতায় নামেন।

এবারের ভয়ংকর বর্বরতার ঘটনাটির পরে রাজনীতিকরা দেশের স্বার্থে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় না দিয়ে দেশের মানুষের জন্য, দেশের স্বার্থকে মাথায় নিয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে ধরে রাখে একযোগে কাজ করবেন, বলে মনে একটা স্বপ্ন বুনেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ভেঙ্গে চুরমার তে চলেছে। রাজনীতিরা তাদের সেই পুরনে “বদঅভ্যাস” এ ফিরে যেতে বসেছেন। তারা এখন পরস্পরকে দোষারোপ করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন।

এই যে “দোষারোপের রাজনৈতিক সংস্কৃতি” তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে কী আমার আমাদের রাজনীতিকরা সোনার বাংলাকে বাঁচাতে পারবে? নাকি স্বদেশের ভুমিকেও সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদের উর্বরমাটি বানানোতে এই “দোষারোপের সংস্কৃতি” সহায়কের ভূমিকা পালন করছে?

পুলিশের মহাপরিদর্শক বললেন, হামলাকারীরা (নিহত পাঁচজন) সবাই জেমএবি। আমরা জানি, এই জেমএবি যখন বাংলাদেশে তাদের জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে শুরু করে বিএনপি-জামাতের শাসনামলে তখনই খবর বেরয়েছে যে এই জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদি সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। কিন্তু তারপরও সরকার দেশে জঙ্গি নেই বলে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জঙ্গিরা যে এতোবড় একটা হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেনি তার কি সার্টিফিকেট আছে সরকারের কাছে?

ঘটনার পর দেশের প্রধান তাঁর ভাষণে বলেছিলেন যে, এই হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী হামলা ধারাবাহিক জঙ্গি হামলারই অংশ! সবমিলিয়ে এটা এখন আর বলার কোন অবকাশ আছে কি যে, আমাদের সোনার বাংলায় “আইএস” নেই! জঙ্গিরা, সন্ত্রাসীরা, হামলাকারীরা যেই হোক না কেন, দেশের মানুষের অধিকার আছে ওদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার। শুধু আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন আর রিপন বলেই সব পরিচয় বলা হয় না। এমন নামে আরও অনেক মানুষ আছেন, তারাও কিন্তু সামাজিকভাবে হেয় হতে পারে, যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হামলাকারি দুর্বৃত্তদের পুরো পরিচয় প্রকাশ না করে।

একজন মন্ত্রি বললেন, জঙ্গিরা খালেদার পাশে বসে থাকে। জামা-শিবির, যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পাশে আছে বটে, আইএস কিন্তু থালেদার পাশে বসে থাকে না। আর খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি সাফ জানিয়ে দিলেন যে, গুলশান হামলার সঙ্গে আইএস জড়িত নয়! খালেদা জিয়া যখন বললেন, সন্ত্রাস-জঙ্গি দমনে জাতীয় ঐক্যের কথা জানালেন, তখন আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বললেন, খালেদাকে আগে মাফ চাইতে হবে!

ওদিকে মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে, জীবীত যাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে তারা এখনো ছাড়া পাননি, আছেন জিজ্ঞাসাবাদের ভেতর। যেসব মানুষ জীবীত উদ্ধার হয়েছে তারা সবাই যে নৃশংসতা ও বর্বরতা স্বচোখে দেখেছে। এমন একটা নৃশংসতা যে চোখে অবলোকন করে অস্ত্রের মুখে জিম্ম অবস্থায় তার যে ট্রমা সৃষ্টি হয় তার থেকে বেরিয়ে আসাটা খুব সহজ নয়। এই অবস্থায় তারা এখন আবার জিজ্ঞাসাবাদের ঝক্কির মধ্যে পড়ে গেলো। এসব মানুষের এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি প্রয়োজন, সেই ট্রমা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে সহায়তা করা। নইলে এসব মানুষ জীবনে এই ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। মানুষগুলিকে পরেও জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতো।

আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ খালেদার জাতীয় ঐক্যের আহবানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। শুলশানের এতবড় বীভৎসতার ঘটনায় যেখানে আইএস তার সাইটে সরকারের ডেথসংখ্যার পরিস্যখ্যান প্রকাশের আগেই পরিস্কার করে জানিয়েছে কতজনকে তাদের “কমান্ডো” রা হত্যা করেছে, সেখানে হানিফ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে, বাংলাদেশ আইএস-আল-কায়দার কোন অস্তিত্ব নেই। যারা এসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী এবং তারাই বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সন্ত্রাস চালিয়ে সরকারকে বিবৃত করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র করছে।

একজন প্রবীণ সাংবাদিক (আওয়ামী সমর্থক) মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, জামাত-শিবিরের লোকেরা কৌশলে আওয়ামী লীগে ঢুকছে এবং আওয়ামী লীগের বদনাম করছে। মিডিয়ার খবরে দেখা যায়, যৌথবাহিনীর অভিযানে গুলশান জিম্মি অবসান ঘটে। এই অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত, ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ ৫ জন নিহত মানুষের ছবি ও সংক্ষিপ্ত নাম মিডিয়ায় পাঠায়, যাদেরকে চিহ্নিত করা হয় হামলাকারি হিসেবে। পুলিশ যাদের ছবি পাঠিয়েছে হামলাকারি হিসেবে তাদের মধ্যে একজনকে ক্যাফের পাচক যার নাম সাইফুল বলে দাবি করেছে তার পরিবার। আইএসের সাইটেও এই লাশের সঙ্গে মিলে এমন কোন ছবি দেখা যায়নি বলে অনেকেই বলছে। জিম্মিউদ্ধার অভিযানে ৬ জন নিহত হবার খবর জানানো হলেও পুলিশ ৫ টি লাশের ছবি প্রকাশ করলো কেন? এই প্রশ্নটি এখন নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে।

অনেকে মনে করছে, জঙ্গিরা বাংলাদেশে একটা আতংক ও ভীতিকর অবস্থা তৈরী এবং তাদের উপস্থিতি জানান দিতেই দেশের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গাটিকেই তারা তাদের হামলার টার্গেটে নেয়। জঙ্গিরা তাদের টার্গট পুর্ণ করতে সাময়িক হলেও সফল হয়েছে বলেও অনেক বিশ্লষক মনে করছে।
শুধু অস্তিত্ব নেই, ওরা করেনি, এটা দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের কাজ বলে সবকিছু চালিয়ে দেয়াটা ববোধহয় কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা এখন ভাবার সময়। আর যা বলছেন তার একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ ও তথ্য থাকা চাই, নইলে মানুষ এমন গতানুগতিক কথায় আস্থা পাবে না। এই দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষ আশা করে সরকার এই বীভিষীকাময় হামলার ব্যাপারে প্রতিপক্ষ ঘায়েল নয় বরং প্রকৃত সত্য উৎঘাটন করে এমন জঘন্য ঘটনা যাতে আর না ঘটতে পারে সেদিকটাতেই গুরুত্ব দেবে।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, এবং বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং চলছে তারা সকলেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। বাহাত্তরের মূল সংবিধান অনুযায়ী এসব যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দল দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকারই পাওয়ার কথা না। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের গণহত্যা এবং জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। মানুষের প্রত্যাশা ছিল মুক্তিযুদ্ধের নের্তৃত্বদানকারি রাজনৈতিক দলটি দেশে বাহাত্তরের মূল সংবিধানকে পুনর্বহাল করে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ও সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম প্রথা বিলোপ করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সামনে এগিয়ে নেবে। কিন্তু এই দলটি ও তাদের জোট দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও সেটি করেনি। অনেকে মনে করে, বাহাত্তরের মূল সংবিধানকে পুনর্বহালের ক্ষেত্রে এই রাজনৈতিক দোদুল্যমানতা দেশে জঙ্গিবাদকে বিকশিত হতে খানিকটা হলেও সহায়তা করেছে। বাহাত্তরের মূল সংবিধান প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের অবস্থান এখনও পরিস্কার নয় বলে অনেকে দাবি।

পরিশেষে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৭ বিদেশী ও তিন বাংলাদেশী এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার আত্মার শান্তি প্রত্যাশা করছি। একই সাথে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আমরা আশা করি তদন্তকারি দলগুলি গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজন এক জঙ্গি এবং জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘটনার পেছনের প্রকৃত ইতিহাসটাকে জানতে পারবে এবং দেশ ও বিশ্ববাসির সামনে সেটা পরিস্কার করবে।

সবশেষে আমি বলবো যেসব মানুষ ধর্মকে অবমাননা করে, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিয়ে মানুষ হত্যা করে তথাকথিত “খিলাফত” প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা আসলে “ইসলাম” এবং অন্য যেকোন ধর্মেরই শত্রু। এরা অমানবিক, মুর্খ এবং কাপুরুষ। এদের অবস্থান হবে নিশ্চিত “দোজখ” এ (যদি বেহেস্ত-দোজখ বলে কিছু থাকে আসলে!!!

 

দুর্ভাগা স্বদেশ, কাপুরুষদের ঔদ্ধত্ত আর সংসদে প্লটরাজনীতি!

জাহাঙ্গীর আকাশ ।। প্রতিজ্ঞ করেছিলাম জন্মভূমির রাজনীতি নিয়ে আর কখনও লিখবো না। আমি সাধারণত শপথ ভাঙতে অভ্যস্ত নই। কিন্তু এবার আমি নেহায়তই নিরুপায় হয়ে ওয়াদার বরখেলাপ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি জানি আমার এই লেখা কারও একটি পশমও নাড়াতে পারবে না। তবুও মনকে প্রবোধ দেবার জন্যই লিখছি। আমার মায়ের ভূমিতে একের পর এক নিষ্ঠুর ও র্ববরতম ঘটনাগুলি ঘটেই চলেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষককে দুর্বৃত্তরা কান ধরে ওঠবস ও নির্যাতন করা হলো। অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে নির্যাতন সইতে হচ্ছে, কাউকে কাউকে প্রাণেও মারা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে র্নিমমভাবে হত্যা করছে ওরা।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে সংঘটিত কয়েকজন বিদেশী হত্যা, লেখক-প্রকাশক ও উন্নয়নকর্মী হত্যা, একের পর এক ব্লগার হত্যাসহ নির্বিচারে ঘটে যাওয়া বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডগুলি নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনা, তর্ক চলছে। দেশব্যাপি পুলিশের সাড়াঁশি অভিযানের মধ্যেই খুন-খারাবি, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে ওরা (একাত্তরের ঘাতক শক্তি) বসে থাকবে! ওরা পাল্টা মরণ ছোবল দেয়ার প্রচেষ্টা চালাবে, এটাই স্বাভাবিক নয় কী?

ধর্মীয় পুরোহিত, আউল-বাউল, আদিবাসী কেউ বাদ পড়ছে না, সব শ্রেণীর মানুষই খুন হচ্ছে। বেছে বেছে এমন সব হত্যাকান্ড ঘটানো হচ্ছে, যেগুলি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠে আন্তর্জাতিকমহলে।  “ধরি মাছ না ছুঁই পানি” এমন আচরণ কল্যাণ নয়, বরং সর্বনাশ ডেকে আনবে। বরং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান পরিস্কার থাকলেই সরকার জনগণের সমর্থন পাবে। কিন্ত সন্ত্রাস দমনের নামে যাকে তাকে ধরে গুলি করে হত্যা, তথাকথিত “বন্দুকযুদ্ধ” এসব ওষুধে সত্যিকারের সন্ত্রাস দমন হবে না। বরং সমালোচনার লাইনটাকেই বর্ধিত করতে সহায়তা করা হবে, যা নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের সমালোচনা ইতোমধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান, স্বৈরশাসক, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেস্টা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির কাছ থেকে এসেছে। খোদ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানও এসব “আইন বহির্ভূত হত্যাকান্ডের সমালোচনায় মুখর।

সাংবাদিক সাগর-রুনির খুনিদের ধরা হলো না আজও। খুনিদের ধরার ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত সাংবাদিক সমাজও আর নড়ে-চড়ে না। আসলে সবইতো হয় ব্যবসা নয় রাজনীতি, কোথায় পেশাদারিত্ব, কোথায় স্বচ্ছতা আর সততা, ঐক্য? রাজনীতির এমন ভয়াবহ দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে যে, স্বার্থের বেলায় সবাই চুপ। মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে, প্লট এবং অ্যাপার্টমেন্ট পাবার আশ্বাসের পর সংসদ সদস্যগণ শান্ত হলেন সংসদে। কী দারুণ রাজনীতি আমাদের! দেশের মানুষের মাথায় ছাদ থাকুক আর নাই থাকুক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি এবং সরকারি প্লট চাই-ই চাই।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যদি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে আমাদের রাজনীতিকদের তাহলে তারা নিজের আরাম-আয়েশের কথা নয়, জনগণের নিরাপত্তা এবং সুখ-শান্তির চিন্তাটাকে আগে অগ্রাধিকার দিতো। কী দুর্ভাগা স্বদেশ আমার! আমি মহান সংসদের কাছে জনগণের পক্ষ নিয়ে জোর গলায় বলছি, অনুগ্রহ করে সংসদ সদস্যদেরকে প্লট বা অ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ দেবার আগে নিশ্চিত করুন যে, ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেকেই একটি করে প্লট পাবে। নইলে দুনিয়াতেই আপনাদের বিচার হবে একদিন, আর এই বিচার করবে প্রকৃতি!

লজ্জায় আমার মাথা নত হয়ে গেলো এই বিদেশভুমে থেকেও। কেন? বিডিনিউজ২৪ লিখেছে, “তনুর বাবা নজরবন্দি”। আর কত অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, জালিমতা, জাহেলিপনা চলবে আমার স্বদেশে! হে প্রকৃতি, দেখাও তুমি তোমার শক্তি, যাতে ওই ঘাতক, কাপুরুষের দল, খুনি-মদমায়েশ, দুর্বৃত্তদল পরাভূত হয়। সাগর-রুনির খুনের ঘটনায় যে নাটক তার ধারাবাহিকতায় আজ মঞ্চস্থ হচ্ছে আমার বোন তনুর খুনিদের রক্ষার নতুন নাটক। হে প্রকৃতি, ওঠাও তোমার মানবতার, ন্যায়বিচারের “তলোয়ার”, কেটে কুচি কুচি কর ওই জালেমদের শয়তানির প্রাসাদ! নইলে যে আমার স্বদেশ কাঁদবে চিরকাল!
আমি বিখ্যাত কোন মানুষ নই, একজন অতি নগন্য সাধারণ মানুষ। স্বদেশের জন্য মন কাঁদে, হ্রদয়জুড়ে বেদনা আর কষ্ট। তবুও আশা করি, স্বদেশ আমার একদিন মাথা তুলে দাঁড়াবে সব অপরাধ, অপরাধী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ আর কলংকটে পায়ের নিচে দলিত করে! আমি জানি এ এক কঠিন লড়াই, তবুও আশা নিয়ে বাঁচি আমি সারাক্ষণ। জয় হবে মানুষেরই।

 

ফের সাংবাদিক নির্যাতন> নেপথ‍্যে দুবর্ৃত্ত রাজনীতি!

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ।। রাজশাহী আমার জন্মস্থান নয়। মানুষ তার জন্মস্থানকে সম্ভবত ভুলতে পারে না। আমার জন্মস্থান পঞ্চগড়। পড়ালেখার জন‍্য আমি আমার জীবনের সেরা সময়টুকু কাটিয়েছি এই রাজশাহীতে।

দীঘর্ বিশ্ববিদ‍্যালয় জীবন এবং সাংবাদিকতা মিলিয়ে পুেরা ১৬ টি বছর কেটেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এই প্রাচীন বিভাগীয় শহরটিতে। রাজশাহীর অলি-গলি আমার চেনা। কী পেশাজীবী, রাজনীতিক, ব‍্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবই আমার চেনা-জানা। কেউ কেউ আবার খুবই ঘনিষ্ট। তাই রাজশাহীতে েকান কিছু ঘটলে বিশেষত েকান খারাপ খবর েচাখে পড়লে মনে ব‍্যাথা লাগে। কষ্ট পাই, দারুণভাবে ভেঙ্গে পড়ি রাজশাহীর েকান দু:সংবাদে।

আর যখন আমার সহকমীর্, সতীথর্ সাংবাদিক বন্ধুরা নিগৃহীত, লাঞ্ছিত, অপমানিত ও হামলার শিকার হন তখন আর দু:খের শেষ থাকে না। লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে আমার। কারণ আমি আমার সহকমর্ীদের দুদর্িনে কাছে থাকতে পারছি না, সহানুভুতি জানাতে পারি না, পারি না হামলাকারিদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে রাজপথের মিছিলে সমবেত হতে। তাই দূর থেকেই কেবল েচাখের জল আর আন্তরিক শুভ প্রত‍্যাশার মাধ‍্যমেই আমার মনের আকুতির প্রকাশ ঘটে।

ডিজিটাল যুগের কল‍্যাণে এখন েকান খবর আর বেশি সময় লাগে না পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে। রাজশাহী মেডিক‍্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের হামলায় ১০ জন সাংবাদিক বন্ধু আহত হয়েছেন। এদের মধ‍্যে একজনের অবস্থা খারাপ, তাকে উনাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এধরণের হামলা ওখানে নতুন কিছু নয়। আমি যখন রাজশাহীতে সাংবাদিকতা করি তখনও এমন অনেক হামলার ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের তৎকালিন কতর্ৃপক্ষ হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। জানি না, সেই ফরমান এখনও বলবৎ আছে কি না।

এমন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলে মন্ত্রি, এমপি ও মেয়ররা ঘটনাস্থলে ছুটে যান, প্রশাসন ঘটনা তদন্তের জন‍্য কমিটি গঠন করে, সন্ত্রাসী যেই েহাক তার কঠিন  শাস্তি হবে বলে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা ফাঁপা বুলি আওড়ায়। এবারও তার ব‍্যতিক্রম ঘটেনি। েখাদ হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস‍্য ঘটনাস্থলে গিয়ে দায়িদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বড়ই তেঁেতা। কারণ এধরণের বহু ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু অপরাধীরা শাস্তি পায়নি। হয়নি েকান সাংবাদিক হত‍্যা-নির্যাতেনর বিচার। সারাদেশ ঝুড়ে এমন শত শত ঘটনার উদাহরণ দেয়া যাবে। বিশেষ করে রাজশাহীতে সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনাগুলির সাথে জড়িতদের সাথে পরবতর্ীতে সমেঝাতার নামে দায়িদের রক্ষা করার বহু নজির রয়েছে।

একটি ঘটনার উদাহরণ দিতে চাই, যদিও এই ঘটনাটি সাংবাদিক নিযর্াতেনর সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়। ২০০৭ সালের ১৮ মে রাজশাহীর বনগ্রামে ওয়াকর্াস পার্টির ওয়াডর্ নেতা মজনু শেখকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী পিটিয়ে হত‍্যা করে। তার ওপর অনুসন্ধানীয় রিেপাটর্ এবং মেয়র লিটন, উনার চাচা েলাটনের সন্ত্রাস ও দুনর্ীতির প্রতিবেদন করার মূল‍্য দিতে গিয়ে আমাকেও নিশ্চিত মৃতু‍্যর দুয়ার থেকে ঘুরে আসতে হয়েছে, আর এখন স্বদেশহারা। যােহাক সেই মজনু হত‍্যা মামলাটির ব‍্যাপারে আমাদের সংসদ সদস‍্য বাদশা সাহেব কী উেদ‍্যাগ নিয়েছেন তাও আজ আমার জানা নেই। তবে শুনেছি সদস‍্য বিদায় ক্ষমতাসীন দলের মেয়র নাকি সেই হত‍্যা মামলাটি আেপাষ করতে মজনুর পরিবারের সদস‍্যদের কাছে বারবার ধরণা দিয়েছিলেন। সেই মজনু হত‍্যা মামলার ভাগ‍্যে কী ঘটেছে তার জন‍্য আমাদের সংসদ সদস‍্য বাদশা সাহেব কী েকান ব‍্যবস্থা নিয়েছেন?

আমি এসব সন্ত্রাসী ঘটনা ও হামলার ঘটনার জন‍্য ওই ইন্টাণর্ীদের দায়ি করতে চাই না। কারণ আমি মনে করি স্বদেশে দুবর্ৃত্ত রাজনীতির কারণে এসব গুন্ডাপান্ডারা একটার পর একটা ঘটনা ঘটােনার সাহস পাচ্ছে। আর সমাজে ন‍্যায়বিচার না থাকলে, সবর্ত্র সবর্গ্রাসী দুর্নীতি জিইয়ে থাকলে, দলবাজি বন্ধ না হলে সন্ত্রাস, হামলা, নির্যাতন, অবিচার কী বন্ধ করা যাবে কখনও? না, কখনও সম্ভব নয়।

আমার প্রত‍্যাশা, সাংবাদিক বন্ধুরা দলমত ভুলে একতাবদ্ধ হবেন। সাংবাদিকরা অবিচার আর অন‍্যায়ের সঙ্গে আেপাষ বা সমেঝাতা নয় বরং দুবর্ৃত্তদের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনির মাধ‍্যমে সমাজের মানুষকে জাগিয়ে তুলবেন এসব সন্ত্রাসী হামলা ও গুন্ডামির বিরুদ্ধে।

আমি আশা করি এবার সাংবাদিক হামলাকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব‍্যবস্থা হবে। এই ঘটনার পেছনে েতা আর রাষ্ট্রীয় এলিট বাহিনীর হাত নেই যে বাদশারা ভয় পাবেন!

পরিশেষে সাংবাদিক বন্ধু যারা পেশাগত কারণে নির্যািতত হলেন তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। ধিক্কার দিচ্ছি হামলাকারি  সন্ত্রাসীদের। ধন‍্যবাদ জানাচ্ছি রাজশাহীর সংসদ সদস‍্য ফজলে েহাসেন বাদশা, আয়েনউদ্দিন ও মেয়র েমাসাদ্দেক েহাসেন বুলবুলকে যাঁরা সাংবাদিকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন। আর আরেকদফায় উনাদের ধন‍্যবাদ জানােবা তখন, যেদিন হামলাকারিদের শাস্তি হবে।

 

দুবর্ৃত্ত রাজনীতির কী নিষ্ঠুরতম নির্মমতা!

জাহাঙ্গীর আকাশ ।। বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল হক (৬৫) সম্মানিভাতার বই বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে জীবনসংসারের চাকাটাকে সচল রাখার প্রাণপন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দৈনিক প্রথম আলোতে একটি হৃদয়স্পশর্ী রিপোর্ট ছাপা হয়েছে।  চোখে জল চলে এলো ছোট্র এই রিপোর্টটি পড়ে। এটি কী আমার আবেগ, ভাবাবেগ নাকি স্বদেশ, সেখানকার  মানুষ ও জীবনের ওপর দুবর্ৃত্ত রাজনীতির নিষ্ঠুরতম নির্মমতার বিরুদ্ধে মানবমুক্তির আশার আলোর প্রতি আমার হৃদয়ের আকুলতা। সেটা আমার জানা নেই।  

মাতৃভূমির বীর সন্তানদের এই করুণ অবস্থার কারণ দুবর্ৃত্ত রাজনীতি। অথচ আমরা স্বদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসার ও বিকাশ নিয়ে কত গলাবাজি করেই চলেছি। কোথায় হাসিনা, কোথায় খালেদা, আসলে উনারাতো পরিবার আর ক্ষমতা নিয়ে মেতে আছেন!!!

একজন পতিত স্বৈরাচারকে নিয়ে অপরজন যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গিবাদিদের সাথে নিয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ে দিনরাত লড়ে চলেছেন, কেউ গদি রক্ষায় আর কেউ চেয়ারে বসার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায়। তাই কেউ এলিটফোর্স দিয়ে স্বাভাবিক মানুষকে অস্বাভাবিক দেখিয়ে হাসপাতালে সেবা দেবার নামে গ্রেফতার করছে, আবার কেউ সন্ত্রাসী-যুদ্ধাপরাধিদের ওপর ভর করে বাসা-বাড়ি ও  বাসে, গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। জনগণ যেন গাছ, আর উনারা দুইজন হলেন করাত, কাজেই মানুষ যেদিকেই যাবেন কোন ভয় নেই আপনাদের-আপনারা কাটা পড়বেনই করাত দিয়ে!

আসলে মানুষের মুক্তি নেই ওখানে, কোথাও না, কোনভাবেই না যতদিন না লোভী, টাকাওয়ালারা আর দুনর্ীতির জন্মদাতারা জনগণকে শোষণ করা বন্ধ না করে-ততদিন! ওখানে কোন আশা, ভরসা করার মতো কিছু নেই। এভাবেই জীবন, মানুষ, মানবতার নিষ্পেষণই কেবল বাড়বে। প্রিয় মাতৃভূমিতে বাড়ছে কেবল মানুষের ওপর ক্ষমতাবান, লোভী, সুবিধাবাদি, চাটুকার আর দুনর্ীতিবাজ বদমায়েশ রাজনীতিকদের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার কষাঘাত। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী-তাও আমার জানা নেই। 

সুদের কারবার ও ক্ষুদ্রঋণ কিভাবে সহিদুলদের জীবনকে বন্ধকী অবস্থার জালে আটকে দিচ্ছে তারও চিত্র ফুটে উঠেছে প্রথম আলোর ছোট্র ওই রিপোর্টে। যাহোক, ওখানে মুক্তিযোদ্ধারা হতভাগ্য আর হাসিনা-খালেদা ও তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গরা সর্বদাই ভাগ্যবান! মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল হকের জীবনের এই বাস্তবতা যতদিন না বুঝবেন আমাদের রাজনীতিকরা, বিশেষত: হাসিনা-খালেদারা ততদিনই মানুষের মুক্তি, মঙ্গল হবে না, জ্বলবে না আশার আলো।

স্বদেশ বাঁচানোর কেউ নেই!

জাহাঙ্গীর আকাশ ।। যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীকে মেরে ফেললো, সরকার কী ঘাস কাটে? মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? ওরা এখন আরও মরিয়া, নৃশংস, ভয়ংকর ও তান্ডবি হয়ে উঠবে, এতে কোনই সন্দেহ নেই। শুধুমাত্র বড় বড় গালগপ্প আর গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে হৈ-হুল্লোড় করলেই বুঝি সংঘাত, সন্ত্রাস ও সহিংসতা দমন করা যাবে না। ক্ষমতার মোহ পরিহার করার মতো নৈতিক শক্তি আর মনে-প্রাণে ও বাস্তবিকতায় গণতন্ত্রের অনুশীলন ছাড়া কালো ও বর্বর শক্তিকে মোকাবেলা করাটাও অত সহজ হবে না। মহাজোটিদের “ধরি মাছ না ছুঁই পানি” এমন আচরণ, আইনের শাসনহীনতা, ক্ষমতায় চিরস্থায়ী থাকার বাসনা আর দুবর্ৃত্তদের ছাড় দেবার মানসিকতা স্বদেশকে ক্রমাগত অন্ধকারেই নিয়ে যাচ্ছে। আর যারা যুদ্ধাপরাধী, স্বৈরাচার, স্বাধীনতাবিরোধী এবং এই অপশক্তিগুলির আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা রাজনৈতিক দল সম্পর্কে বলার কিছু নেই, কারণ তারাতো ওদের বাঁচাতেই চাইবে, কিন্তু চেতনাধারিরা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ওদের বিচারটা শেষ করতে পারলো না! কষ্ট হলো এই স্বদেশকে-এখন মিনি পাকিস্তান, আফগানিস্থান নতুবা একটা তালেবানি আইয়ামে জাহেলিয়াতির রাষ্ট্রে পরিণত করার পথকে সুগম করে দিলো “প্রগতিশীল” সরকারের দোদুল্লমানতা! কে বাঁচাবে আমার স্বদেশকে?